প্রকাশ : ১৯ জুন,২০২২      ১০:২৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তেলের দাম না কমার কারণ কি তা পরিস্কার নয়।মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ বিপণনবর্ষে সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়বে ৪ শতাংশ। অন্যদিকে পাম অয়েলের দুই শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পাম উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ ফিরে আসার পাশাপাশি শ্রমিক সংকট কেটে যাওয়ারও জোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
শীর্ষ বাজারে ভোক্তা চাহিদা কমার পাশাপাশি এসব পূর্বাভাসের প্রভাবে প্রায় সব ধরনের ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজারদর এখন নিম্নমুখী। সর্বশেষ গতকাল একদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে টনপ্রতি ৮২ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) গতকাল প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম নেমে আসে ১ হাজার ৬৩০ ডলারে। আগের দিনও তা কেনাবেচা হয়েছে টনপ্রতি ১ হাজার ৭১২ ডলারে। এক সপ্তাহ আগে এর মূল্য ছিল প্রতি টন ১ হাজার ৭৮১ ডলার। সে হিসেবে একদিনে পণ্যটির দাম কমেছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সপ্তাহে কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ।

 

গত এক সপ্তাহে বুর্সা ডেরিভেটিভসে পণ্যটির দাম কমেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে দরপতনের হার ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বাভাসের পাশাপাশি শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া এখন পাম অয়েলের রফতানি বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। একই পথে হাঁটছে মালয়েশিয়াও। বাজারে এখন এরই প্রভাব স্পষ্ট বলে জানিয়েছেন বুর্সা ডেরিভেটিভসের ট্রেডাররা ।

 

প্রতিবেশী দেশ ভারতেও গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও সূর্যমুখী তেলের দাম লিটারে ৫ থেকে ১৫ রুপি পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। গত ১১ জুন সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের মধ্যে পাম অয়েলের লিটারপ্রতি দাম ১৪ টাকা কমানো হলেও সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৭ টাকা। শিগগিরই দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন বাজারের নীতিনির্ধারকরা।

 

ভোজ্যতেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিপণন কার্যক্রমকে ‘বিশেষায়িত’ আখ্যা দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দ্রুততম সময়ের ব্যবধানে দাম সমন্বয়ের সুযোগ নেই। গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম টনপ্রতি প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ডলার পর্যন্ত কমলেও এর সুফল পেতে দেশের ভোক্তাদের অপেক্ষা করতে হবে অন্তত দেড় মাস। বিশ্ববাজারের প্রভাব বিশ্লেষণ করে আগামী কোরবানির ঈদের আগে দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, ভোজ্যতেল আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির সদস্যরা বৈঠকের মাধ্যমে বিগত কয়েক মাস আগে আমদানি হওয়া ইনবন্ড-আউটবন্ড ভোজ্যতেলের তথ্য পর্যালোচনা করে দাম নির্ধারণ করে। এজন্য একটি সূত্র মেনে চলা হয়। যার কারণে বর্তমান সময়ে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও এর সুফল পেতে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়। সর্বশেষ দাম সমন্বয় হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। নতুন দাম ঘোষণা করতে অন্তত আরো এক মাস লাগবে।

এছাড়া এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি ১৫ দিন পর পর ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু এক মাস বা তারও বেশি সময় পর মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি ভোক্তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। এতে বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশে ভোজ্যতেলের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ে গত ঈদুল ফিতরের পর। গত ৫ মে ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি এক লাফে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করে কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামও বাড়িয়ে দেয়া হয়।

 

নাম প্রকাশ না করে ভোজ্যতেল আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, গত রোজার আগে দেশীয় ভোক্তাদের ওপর বাড়তি দাম চাপিয়ে না দিতে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যার কারণে ওই সময়ে আমদানিকারকরা ভোজ্যতেল বিপণনে বড় ধরনের লোকসান করে। ঈদের পর ব্যবসায়ীদের সে লোকসান পুষিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। হতে পারে এ কারণেই বর্তমানে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দর সমন্বয়ে কিছুটা বিলম্ব করছে।

এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫৮ টাকা করা হয়। এক্ষেত্রে সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারপ্রতি ৫-৭ টাকা। পাম অয়েলের দাম কমানো হয়েছে লিটারপ্রতি ১৪ টাকা ।