খুলনায় বেড়িবাধের ওপর বসবাস করছে ৭০০ পরিবার

অনলাইন ডেস্ক,

 

খুলনার কয়রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার বিধ্বস্ত হয়ে ঘরবাড়িহারা সাত শতাধিক পরিবারের স্থান হয়েছে বেড়িবাঁধের উপর। আইলা, সিডর, আম্পানসহ আটটি ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে এসব পরিবারের কারও জমি গেছে নদীতে আবার কারও বাড়িঘর ভেসে গেছে নোনা পানিতে।

সম্প্রতি এক সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে খুটিঘাটা খেয়াঘাট অবধি কপোতাক্ষ নদের মাত্র আধা কিলোমিটার বাঁধের উপর এখনো বসবাস করছে ৫০টি পরিবার। যে যেখানে পেরেছে ঘর বানিয়ে বসতি গড়েছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় আইলায় গৃহহারা ২২টি পরিবার উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী এলাকায় বেড়িবাঁধের উপর এবং আম্পানে গৃহহারা ১৯ পরিবার হাজতখালী স্লুইসগেট থেকে কাশীর হাটখোলা পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদের বাঁধের উপর মানবেতর জীবনযাপন করছে। তা ছাড়াও মহারাজপুর সুতির অফিস এলাকা থেকে মঠবাড়িয়া বেড়িবাঁধের ওপর বাস্তুহারা মানুষের বসবাসও চোখ পড়ে।

 

 

এ বিষয়ে কয়রা লঞ্চঘাট, দক্ষিণ বেদকাশী ও মহেশ্বরীপুরসহ কয়রার সাতটি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গোটা উপজেলায় বাঁধের উপর বসবাস করছে প্রায় সাত শতাধিক পরিবার।

উত্তর বেদকাশী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের বাইরে, বাঁধের উপরে এবং বাঁধের ভেতরে অসংখ্য বাড়িঘর। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত এসব মানুষের এটাই যেন নিয়তি। অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ হয়নি বলে তারা এখনো এখানেই পড়ে আছেন।

 

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে গৃহহীন হয়েছেন উপকূলীয় অসংখ্য মানুষ। কেউ খুলনা নগরীতে, কেউ রাজধানীতে, আবার কেউ পার্বত্য অঞ্চল ও দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন। পেশা পরিবর্তন ও পেশা হারিয়েছেন বহু মানুষ। আর যারা এলাকায় আছেন, তাদের টিকে থাকতে হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে। ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৩ বছরেও ভাগ্য বদলায়নি উপকূলীয় কয়রা উপজেলার মানুষের। কয়রায় নদীর চরে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত তিনটি গুচ্ছগ্রামও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। সেটিও বসবাসের অনুপযোগী।

 

 

খুলনা জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে কয়রা উপজেলায় আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর, আম্পানসহ আটটি ঘূর্ণিঝড়। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরে সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৯ সালের ৪ মে ফণী, ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালের ২৬ মে ইয়াস, ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু ও ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা আঘাত করলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল সামান্য।

তবে বেসরকারি সংস্থার কিছু সমীক্ষা রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, কয়রা ও মহারাজপুর ইউনিয়ন এবং তার পাশের পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী, দেলুটি, গড়ইখালী ও লতা ইউনিয়নের ৪ হাজার ৩১৮ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

এ প্রসঙ্গে কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্কের (ক্লিন) প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর তারা কয়রা ও শ্যামনগরে সমীক্ষা চালান। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় ২১ হাজার মানুষ এলাকা থেকে অন্যত্রে চলে গেছেন। ইয়াসের পরও অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, একটি দুর্যোগের ক্ষত না শুকাতেই আরেকটি দুর্যোগের হানা মানুষকে নিঃস্ব করে ফেলে। অসহায় মানুষ যে যেভাবে পারছেন বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সেখান থেকে সরানো সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকুনুজ্জামান বলেন, উপজেলাটি ভৌগোলিক কারণে দুর্যোগকবলিত। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাটি তিন দিক থেকে নদীবেষ্টিত। যে কারণে ছোট-খাটো দুর্যোগেও প্লাবিত হয়ে পড়ে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়িবাঁধের উপর বসবাসকারী লোকজনকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান।

 

 

বিভাগ : সারাদেশ

 

বেতনা নিউজ ২৪ /অ/ডে/

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version