শিক্ষা ডেস্ক,
‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯২১ সালের এই দিনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে প্রতিষ্ঠানটির। তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত বাংলায় এটিই ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এবারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী প্রতিপাদ্য ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন : ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা’।
বাঙালি জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে আলোর মশাল নিয়ে সামনে এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনে করা হয় বাঙালি জাতির প্রতিবাদী স্বত্বার স্ফুরণ। ৪৮ থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে এই নাম জড়িয়ে আছে।
১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটশ ভারতের ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এরপর পূর্ব ভাইস রয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানান ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ বাংলার অন্য নেতারা।
২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যারিস্টার আর নাথানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট।
ওই বছরই ডিসেম্বরে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভা পাশ করে ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’।
আর ছাত্রছাত্রীদর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়কার ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলো এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশ গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালে ৩টি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন। শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা চড়াই-উতরাই। এর মধ্যে প্রশংসার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা, কটাক্ষ সইতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, শিক্ষকদের মানসম্পন্ন গবেষণার স্বল্পতা। তবে এসব সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রথমবারের মতো হয়েছে মাস্টার প্ল্যান; যার মাধ্যমে দূর হবে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো খাতে। শিক্ষকদের গবেষণার মান বৃদ্ধি ও দক্ষ করে তোলার জন্যও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ওভারসিস স্কলারশিপ বৃত্তি, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর সংবলিত আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য শিক্ষক অনুদান এবং গবেষণা প্রকাশ কার্যক্রম চলমান রাখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার গুণগত মানের পরিবর্তন হচ্ছে না। তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব কার্যক্রম গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। আর এর পেছনে কাজ করে সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলসহ নানা বডি।
আর এই প্রতিটি কাঠামোর স্বাধীনভাবে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে হবে। এছাড়াও এই কাঠামোগুলোয় দায়িত্বশীল এবং গঠনমূলক চিন্তার প্রকাশ থাকতে হবে।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি:
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সকাল ১০টায় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে সমবেত হবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে থিম সং পরিবেশিত হবে।
সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন : ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আলোচনা সভায় অংশ নেবেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
বেতনা নিউজ ২৪/শি/ডে/
Leave a Reply