তালতলীতে স্কুল ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে প্রাইভেট শিক্ষক

অনলাইন ডেস্ক,

 

সম্প্রতি বরগুনার তালতলীতে এক স্কুল ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়েছেন প্রাইভেট শিক্ষক। পেটানোর ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্কুল ছাত্র আসাদ উপজেলার লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

 

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। এর প্রায় দেড় মাস আগে উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টারে এ ঘটনাটি ঘটে।

 

জানা যায়, উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টার নামের একটি কোচিং খোলেন স্থানীয় ছগির হোসেন। যার সরকারি কোনো অনুমতি নেই। সেখানে ওই এলাকার লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণির প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ানো হয়।

ওই কোচিং সেন্টারে আর কোনো শিক্ষক না থাকায় ছগির হোসেন একাই শিক্ষকতা করেন। মাঝেমধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে তার নিচের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। ওই কোচিং সেন্টারে প্রায় দেড় মাস আগে ৮ম শ্রেণির ছাত্র আসাদকে মারধর করে কোচিং শিক্ষক ছগির। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ১ মিনিট ৩১ সেকেন্ড ভিডিওটিতে দেখা যায় ছাত্রকে বেত দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। এসময় ওই ছাত্র আসাদ শিক্ষকের হাতে পায়ে ধরেছে। ভাইরালের পরপরই সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। ভিডিও ভাইরালের পরই একের পর এক ছাত্র-ছাত্রীরা নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলছেন।

আহত স্কুল ছাত্র আসাদ জানান, প্রায় দেড় মাস আগে আমার ক্লাসের এক বন্ধুর সাথে দুষ্টুমি করি। দুষ্টুমি করার পরে প্রাইভেট শিক্ষক ছগির স্যারের ভয়ে আমি তিন দিন যাবৎ কোচিং সেন্টারে যাইনি। তার পরে প্রাইভেটের বড় ভাইদের দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে একটি রুমে আটকানো হয়। এরপর ছগির স্যার ১০টি বেত নিয়ে আসে। প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত আমাকে পেটাতে থাকে।

 

আমি স্যারের হাতে পায়ে ধরলেও আমাকে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। এই আধাঘণ্টায় ৭টি বেত ভেঙে ফেলেছেন ওই পাষন্ড শিক্ষক। বেধড়ক মারধর করায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে ছেড়ে দেয় ও একটি রুমে আটকে রাখে। জ্ঞান ফিরলে আমাকে আবারও মারধরের ভয় দেখানো হয়, যাতে এই বিষয়টি কাউকে না বলি। পরে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে আমাকে ওষুধ কিনে দেয়। আমি স্যারের ভয়ে এতদিন মুখ খুলিনি, তারপর দেখি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । ভিডিওটি দেখে আমি নিজেও অবাক হয়ে গেছি।

নাম প্রকাশে একাধিক কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের কারণে-অকারণে এভাবেই নির্যাতন করা হত। ছগির স্যারের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে সাহস পাইনি।

সাকসেস কোচিং সেন্টারের মালিক ও শিক্ষক ছগির হোসেন বলেন, ওই ছাত্র দুষ্টুমি করার পরে আমি বেত দিয়ে ৪০টি পিটান দিছি। সেটা কে বা কারা ভিডিও করেছে তা আমি দেখিনি। ভাই এ বিষয়ে আপনাদের নিউজ করার কোন দরকার নেই। আপনাদের সাথে তালতলী এসে দেখা করব।

লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী বলেন, ওই কোচিং সেন্টারে আমার এই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আসাদকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। ভিডিওতে যেভাবে দেখেছি তাতে গরুকেও মানুষ এভাবে পেটায় না। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তালতলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস.এম সাদিক তানভীর বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমিও দেখেছি। খুবই দুঃখজনক বিষয়! পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধের ভিতরেও পড়ে এটি। সে ক্ষেত্রে থানায় ওই ছাত্রের অভিভাবকরা মামলা করতে পারেন।

 

 

 

বেতনা নিউজ ২৪ /অ/ডে/

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version