পেঙ্গুইন সোয়েটার নির্মাতার গল্প

ছবি : সংগৃহীত

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২২, ০১:৩১

পেঙ্গুইনদের সোয়াটার পরার কথা শুনে একটু অবাক হচ্ছেন? পেঙ্গুইনের বাস বিশ্বের অন্যতম শীতলতম স্থান অ্যান্টার্টিকায়। বিশ্বের প্রবীণ মানুষদের তালিকায় রয়েছেন অ্যালফ্রেড অ্যালফি ডেট। গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে প্রবীণ পুরুষ ছিলেন অ্যালফ্রেড । তার নেশা ছিল পেঙ্গুইন ছানাদের জন্য সোয়েটার বোনা । ২০১৬ সালে ১১১ বছর বয়সে মারা যান তিনি ।

মূলত আহত পেঙ্গুইন ছানাদের সুস্থ করতে উলের সোয়েটার বানাতেন অ্যালফ্রেড। তিনি ৮০ বছর ধরে সোয়েটার বোনার কাজ করেছেন। পেশায় একজন তাঁতী ছিলেন অ্যালফ্রেড। বয়সের কারণে কাজ থেকে অবসর নেন তিনি। তখন সময় কাটানো খুবই কষ্টকর হয়ে যায় সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকা মানুষটি।

সময়টা ২০১৩ সাল। একটি জাহাজ থেকে তেলের ট্যংকার ভেঙে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পেঙ্গুইনদের অসুস্থ করতে লাগলো। শত শত পেঙ্গুইনের ছানা মারা যেত লাগলো। তখন তিনি কাজে নামলেন। এই দুটি দেশে ছিল মোট ৩২ হাজার পেঙ্গুইন।

ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়ান অংশে আছে ফিলিপ আইল্যান্ড। সেখানেই পেঙ্গুইন দল বেঁধে একটি জায়গাতে বাস করে। অ্যালফ্রেড সেখানকার দ্য ফিলিপ আইল্যান্ড পেঙ্গুইন ফাউন্ডেশন আবেদন করতে শুরু করলেন। সবাইকে উলের জার্সি তৈরি করতে অনুদান দিতে, যাতে বেঁচে যাওয়া পেঙ্গুইন ছানাগুলোকে নিশ্চিত জীবন উপহার দেয়া যায়।

অ্যালফ্রেডের আবেদনে সারা দেন দ্য ফিলিপ আইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে আহত, দুর্বল ও রোগাক্রান্ত ছানাগুলোকে উলের জার্সি পরাচ্ছেন অ্যালফ্রেড। নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, তাদের চটচটে গা ও তেলে পূর্ণ ছোট্ট ডানাগুলোতে নানা বিপজ্জনক উপাদান লেগে আরও আহত যাতে করতে না পারে। এর আগেও তারা এভাবে সোয়েটার পরিয়ে বাঁচিয়েছেন অনেক আহত পেঙ্গুইনকে।

 

তবে অ্যালফ্রেড সোয়াটার বুনতে শিখিয়েছেন অনেক মানুষকে। তিনি যে হাসপাতালে ছিলেন সেখান কার নার্সরা তার কাজ খুবই পছন্দ করতেন। তিনি খুব যত্ন নিয়েই নার্সদের শিখিয়েছিলেন উল বুনতে।

ফিলিপ আইল্যান্ড পেঙ্গুইন ফাউন্ডেশনের অনুরোধে পেঙ্গুইন ছানাদের ভালোবেসে একের পর উলের ছোট্ট নানা রঙের সোয়েটার বুনে গেলেন অ্যালফি। ভালো লাগা থেকে বন্ধুবান্ধব এবং অপুষ্ট শিশুদের জন্য উলের সোয়েটার বানিয়েছেন।

ব্যক্তিজীবনে তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। মোট সাতটি ছেলেমেয়ের বাবা। নাতি-নাতনি আছেন মোট ২০ জন। চলে আসেন অস্ট্রেলিয়ায়।

অ্যালফ্রেডের পারিবারিক পেশা ছিল তাঁত বোনা। তবে তাতে ছিল অর্থাভাব। এজন্য সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। এখানে এসেও এই কাজ করেছেন তার বাবা। আগের চেয়ে ভালোই ছিলেন তারা। তবে সেই দক্ষতা তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন পেঙ্গুইন ছানাদের জীবন বাঁচাতে।

২০১৩ সালে তার ১০৮তম জন্মদিন পালন করা হয় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে। এর দুই বছর পর তার ১১০ তম জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দেশের গভর্নর জেনারেল স্যার পিটার ক্রসগ্রোভ। অ্যালফি মারা যান নিউ সাউথ ওয়েলসের উমিনাতে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

 

 

 

 

 

 

 

বেতনা নিউজ ২৪ আ/ডে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version