আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
দাসপ্রথার মতো অমানবিক ব্যবস্থার বিলোপ ঘটেছে সেই কবে। একসময় হাটবাজারে মানুষ বেচাকেনা হতো। ক্রীতদাসদের দিয়ে জোর করে করানো হতো নানা কাজ। তাদের ওপর চলত নিষ্ঠুর-পাশবিক নির্যাতন। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এমন দাসপ্রথার প্রচলন ছিল প্রাচীন, মধ্যযুগ পেরিয়ে শিল্পবিপ্লবের আগ পর্যন্তও। নানা আন্দোলন-সংগ্রামের পর উনিশ শতকের শেষ দিকে এসে বিলুপ্ত হতে শুরু করে এই প্রথা। আর ১৯৪৯ সাল থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবসও পালন করা হচ্ছে।
তবে শ্রম বিশ্নেষকরা বলছেন, আধুনিক যুগে অনেকটা নতুন রূপে ফিরে এসেছে পুরোনো দাসব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যার নাম দিয়েছে ‘আধুনিক দাসত্ব’। সংস্থাটির মতে, হুমকির মুখে বা জোর করে নানা ধরনের কাজ করানো, কর্মপরিবেশ না থাকা কারখানায় শ্রম বিক্রি, যৌন পেশায় নিয়োজিত থাকা, জোরপূর্বক বিয়ে ইত্যাদি দাসত্বের নতুন এক রূপ।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
গত পাঁচ বছরে বিশ্বে আধুনিক দাসের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০২১ সালে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯৬ লাখে। যেটি ২০১৬ সালে ছিল ৪ কোটির কিছু বেশি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ওয়াক ফ্রির সাথে যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করে আইএলও।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের হিসাবে, বাধ্যতামূলকভাবে শ্রম দিতে হয়েছে দুই কোটি ৭৬ লাখ মানুষকে। জোরপূর্বক বিয়ের শিকার হতে হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষকে। ২০১৬ সালের হিসাবে বিভিন্ন কাজ করতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৯ লাখ। জোরপূর্বক বিয়ের শিকার হতে হয়েছিল ১ কোটি ৫৪ লাখ মানুষকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর জোরপূর্বক বিভিন্ন কাজে খাটানোর ৮৬ শতাংশই ঘটেছে বেসরকারি খাতে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়েছে ১৪ শতাংশ। বলপূর্বক কাজ করানোর ২৩ শতাংশ হয়েছে যৌন ব্যবসায়। শ্রম শোষণের শিকার হওয়া প্রতি আটজনের একজন শিশু। প্রতিবেদনটিতে দেশভিত্তিক কোনো চিত্র তুলে ধরা হয়নি। তবে আরব দেশগুলোতে আধুনিক দাসত্বের হার সবচেয়ে বেশি।
আইওএমের তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯-এর কারণে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শিশুদের বের করে এনে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে বাধ্য করতে একটি মানব পাচার চক্র সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বাধার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বেতনা নিউজ ২৪ /আ/ডে/
Leave a Reply