ভোলার মনপুরায় সার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে : দিশেহারা কৃষক

অনলাইন ডেস্ক,

 

 

সম্প্রতি ভোলার মনপুরা উপজেলায়  কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সার। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ স্থানীয় কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনা তোয়াক্কা না করেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।

সূত্র থেকে জানা গেছে, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরিয়া সারে কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এরপর বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম।

তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষিতে ব্যবহৃত অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ কৃষক। তারা না পারছে কৃষিকাজ ছাড়তে, না পারছে ধরে রাখতে।

‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো ভোলার মনপুরা উপজেলার বাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সার। এতে উপজেলাজুড়ে উৎকণ্ঠা ও হতাশা বিরাজ করছে।

উপজেলার হাজিরহাট, ফকিরহাট, মাস্টার হাট, বাংলাবাজার, সিরাজগঞ্জ,  চৌধুরী বাজার, চৌমুহনীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১১০০ টাকার ইউরিয়া সার বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ থেকে ১৩৫০ টাকায়, ৮০০ টাকা মূল্যের ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সারের বস্তা ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে, ১১০০ টাকার ট্রিপল সুপার ফসফেট বা টিএসপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় এবং ৭৫০ টাকার এমওপি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা বস্তা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

এতে প্রতি বস্তা  সার কেনার সময় কৃষককে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা। উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের কৃষক জলিল জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে আমন আবাদের জন্য প্রথম অবস্থায় আমার তিন বস্তা ইউরিয়া, এক বস্তা টিএসপি ও এক বস্তা পটাশ সারের দরকার হয়।

তবে  বাধ্য হয়ে এক বস্তা ইউরিয়া ১২৫০ টাকায়, ১০ কেজি পটাশ ২০ টাকা আর ১০ কেজি টিএসপি কিনেছেন ২৯ টাকা দরে।

অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ২২ টাকা, টিএসপি ২২ এবং পটাশ ১৫ টাকা । তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যে এখন পর্যন্ত কোনো কৃষক সার সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানান অনেক কৃষক।

তবে চলতি আমন মৌসুমে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে তাদের। এতে করে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে উপজেলার বর্গাচাষি ও ক্ষুদ্র কৃষক। বর্গাচাষি মহিউদ্দিন জানান, ‘সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদনে বাড়তি ৩ হাজার টাকা খরচ পড়বে।

প্রতি বিঘা জমিতে ৯-১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ফসল উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য না পেলে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়তে হবে। গত বছর বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ ৩-৪ হাজার টাকা কম ছিল। সম্প্রতি এবার ডিজেল ব্যবসায়ীদের মতো সার ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট করছে।

কৃষকদের ভাষ্য, সরকারি সারের ডিলাররা থাকেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে। সঠিকভাবে দেখভাল না করায় বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তিনটি সার পেতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে দেড়গুণ অর্থ।

তবে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চড়া মূল্যে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।

প্রতিটি দোকানে লাল কাপড়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশ দেওয়া থাকলেও বাজারের কোথাও তা চোখে পড়েনি। উপজেলার কিছু রিটেইলারের দোকানে লাল কাপড়ে মূল্য তালিকা টানানো থাকলেও হচ্ছে না সেই দামে বিক্রি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বিসিআইসির ডিলাররাই খুচরা বিক্রিমূল্যে আমাদের কাছে সার বিক্রি করেন। বিক্রির সময় ডিলাররা আমাদের কোনো রশিদও দেন না।

সে ক্ষেত্রে আমরা কি করে সরকারি দর অনুযায়ী সার বিক্রি করব? তাই বাধ্য হয়ে সরকারি মূল্য তালিকার বাইরে  সার বিক্রি করতে হয়।

সরকারি সার অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন জানান, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।

নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির বিষয়টিও আমাদের জানা নেই। অভিযোগ পেলে সার ডিলার বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

 

 

 

 

 

বেতনা নিউজ ২৪ /অ/ডে/

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version