1. admin@betnanews24.com : Betna :
মহাস্থানগড় খননে বেরিয়ে এসেছে গুপ্ত যুগের দুর্লভ প্রত্ন নিদর্শন | বেতনা নিউজ ২৪
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

মহাস্থানগড় খননে বেরিয়ে এসেছে গুপ্ত যুগের দুর্লভ প্রত্ন নিদর্শন

বেতনা নিউজ ২৪ ডেস্ক :
  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৬ মে, ২০২২
  • ১২১ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

মহাস্থানগড় খননে বেরিয়ে এসেছে গুপ্ত যুগের দুর্লভ প্রত্ন নিদর্শন।

প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়। ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় খননে বেরিয়ে এসেছে গুপ্ত যুগের দুর্লভ প্রত্ন নিদর্শন। আড়াই হাজার বছর আগের ইতিহাস ও ঐহিত্য সমৃদ্ধ ছিল এ নগরী। মহাস্থানগড়ের ভেতরের একটি অংশের নাম বৈরাগীর ভিটা। প্রাচীন দুর্গনগরী মহাস্থান গড়ের জাহাজঘাটা থেকে দক্ষিণে এবং পরশুরাম প্যালেসের উত্তরে বৈরাগী ভিটার অবস্থান। এ স্থানটি একটি রাজবাড়ি ছিল বলে ধারণা করা হয়। সেই সময়ের রাজা কর্তৃক মুনি, ঋষি বা বৈরাগীর সেবা করা হতো বলে স্থানটির নাম বৈরাগীর ভিটা।

মহাস্থানগড়ের দুর্গ নগরীর প্রাচীরের দক্ষিণে অবস্থিত বৈরাগীর ভিটায় ১৯২৮ সালের দিকে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালিয়ে পাল আমলের প্রাথমিক ও শেষ যুগের দুটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ঠিক তার পাশেই লাগানো স্থানের নাম ধরা হয় লইয়ের কুড়ি বা মহাস্থানভিটা হিসেবে। পত্নতত্ত্ব কিছু পাওয়ার আশা থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড়ের লইয়েরকুড়ি ও বৈরাগীর ভিটায় খনন কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর। খনন কাজটি শেষ হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।

খনন কাজ করে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স যৌথভাবে। ওই সময় প্রায় দুই মাস খননের পর পাওয়া যায় গুপ্ত, পাল ও মৌর্য আমলের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অবকাঠামো ও বেশ কিছু প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিজস্ব অর্থায়নে খননকাজ পরিচালনা করার পর উন্মোচিত অবকাঠামো নিয়ে গবেষণা করা হয়। এরপর আবারো চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে খনন কাজ শুরু হয়েছে। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১ মার্চ বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান গড়ে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও প্রাপ্ত পুরাকীর্তির ইতিহাস ঐতিহ্য খুঁজে বের করা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে পুনরায় খনন শুরু হয়। 

চলতি খননকাজে ফিল্ড পরিচালক হিসেবে আছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা। মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা খনন কাজে দলনেতা হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া খনন কাজে যুক্ত রয়েছেন রংপুরের তাজহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রধান নকশা অঙ্কনকারী আফজাল হোসেন মণ্ডল, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাসনাত বিন ইসলাম, আলোকচিত্রী আবুল কালাম আজাদ, সার্ভেয়ার মুর্শিদ কামাল ভূঁইয়া ও আলোকচিত্র মুদ্রাকর দিদারুল আলম।

স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত ১৬ জন শ্রমিক এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। মহাস্থানগড়ে এ বছরের ১ মার্চ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু হয়। টানা প্রায় দুই মাস ধরে মহাস্থানগড় দুর্গ নগরীর ভেতরে বৈরাগী ভিটায় এবার চালানো হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। মাঝখানে ঈদের ছুটির কারণে সপ্তাহ দুয়েক বন্ধ থাকে খনন কাজ। ‘বৈরাগীর ভিটায়’ খননে মিলেছে গুপ্ত যুগের একটি বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ স্তুপের ধ্বংসাবশেষ, এর সাথে পাওয়া গেছে প্রাচীন লিপি খচিত সিল, প্রত্নযুগের টেরাকোটা, কালো চকচকে ভগ্ন মৃৎ পাত্র, অলংকৃত ইট, পোড়া মাটির তৈরি মানবমূর্তি, পোড়া মাটির খেলনার ভগ্নাংশ, তৈজশপত্রের ভগ্নাংশ, পোড়া মাটির পাখি, প্রদীপ, কালির দোয়াত, পাথরের গুটিকাসহ বিভিন্ন প্রত্ন সামগ্রী।

টানা প্রায় দুই মাস ধরে বৈরাগী ভিটায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলে, ঈদের ছুটির কারণে সপ্তাহ দুয়েক বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে খনন কাজ। শনিবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাস্থান জাদুঘর চত্বরে বৈরাগীর ভিটায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন।

মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, প্রত্ন নিদর্শন সযত্নে বের করতে খনন কাজে গেতি, কোদাল, চাকু ব্যবহার হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খনন কাজ অব্যহত থাকবে বলে জানান তিনি।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বগুড়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা জানান, আমাদের খনন কাজ চলমান রয়েছে। এবার খনন কাজে যা পাওয়া গেছে তা হলো চারটি স্তুপ চারপাশে, স্তুপকে ঘিরে চমৎকার বাউন্ডারি রয়েছে। যা একটি বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ স্তুপের ধ্বংসাবশেষ, এমন স্থাপনা ইতিপূর্বে পাওয়া যায়নি, এছাড়া বিভিন্ন প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) রতন চন্দ্র পণ্ডিত জানান, হাজার হাজার বছরের পুরনো আমাদের আর্কোলজি ইতিহাস। আমাদের দায়িত্ব সেগুলো খুঁজে বের করে জনগণের মাঝে তুলে ধরা। আমরা সেই কাজটি করছি। জনগনের জন্য প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ, যা আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরি। মহাস্থানে খননে যা পাওয়া গেছে সেসব প্রত্নবস্তু গুপ্ত সময়ের, তবে প্রত্নতাত্ত্বিককরা গবেষণা করে বলতে পারবেন এগুলো আসলে কোন সময়ের। তবে ১৭০০ থেকে ১৮০০ বছর আগের বলে ধারণা করেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা