ইউক্রেনে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

 

সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার ভূখণ্ড রক্ষার জন্য তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত। বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই ব্যক্তির এমন মন্তব্যে আশঙ্কা দেখা দেয় যে, রাশিয়া হয়তো ইউক্রেনে একটি  ‘কৌশলগত’ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

পুতনের এমন মন্তব্যের পর বিশ্বজুড়ে কার্যত সাড়া পড়ে গেছে। বিশ্বের বহু নেতা পুতিনের এমন হুমকির সমালোচনা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে গুরুতর সামরিক সংকটের সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন বাইডেন ।

 

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র কি?
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র হলো ছোট পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং ডেলিভারি সিস্টেম যা যুদ্ধক্ষেত্রে বা সীমিত হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়। এগুলো ব্যাপক তেজস্ক্রিয় মাত্রা সৃষ্টি না করে কেবল একটি নির্দিষ্ট এলাকায় শত্রুর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার লক্ষে ডিজাইন করা হয়ে থাকে।

সবচেয়ে ছোট কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র এক কিলোটন বা তার কম হতে পারে (এক হাজার টন বিস্ফোরক টিএনটি-এর সমতুল্য উৎপাদন করে)। অন্যদিকে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রগুলো ১০০ কিলোটনের মতো বড় হতে পারে।

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বড় মাত্রার (১ হাজার কিলোটন পর্যন্ত) হয়ে থাকে এবং তা দূর থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়ে থাকে। ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্র যে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল তা ছিল ১৫ কিলোটনের বোমা।

 

রাশিয়ার কি কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র আছে?
মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, রাশিয়ার কাছে প্রায় দুই হাজার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। রাশিয়ার হাতে থাকা এসব কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেডগুলো বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রে স্থাপন করা যেতে পারে যা সাধারণত ক্রুজ মিসাইল ও আর্টিলারি শেলগুলোর বিস্ফোরক সরবরাহ করতেও ব্যবহৃত হয়।

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো বিমান এবং জাহাজ থেকেও নিক্ষেপ করা যেতে পারে। মূলত জাহাজ-বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র, টর্পেডো হিসাবে সেগুলো ব্যবহার করা সম্ভব।

 

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাশিয়া এসব অস্ত্রের পরিসীমা এবং নির্ভুল হামলার সক্ষমতা আরও উন্নত করতে প্রচুর ার্থ বিনিয়োগ করছে।

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রর ব্যবহার কি আগে কখনও হয়েছে?
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র এর আগে কখনও কোনো সংঘাতে ব্যবহার করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো আধুনিক প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সমানভাবে কার্যকর বলে মনে করেছে।

এছাড়া কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশই এখন পর্যন্ত কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি। তবে, বড় কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে ছোট কৌশলগত অস্ত্র ব্যবহার করতে ইচ্ছুক হতে পারে রাশিয়া।

ভ্রাডিমির পুতিনের পারমাণবিক হুমকি কি আসলেই  উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে।

 

সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। এছাড়া হামলার শুরুর মাত্র চারদিনের মাথায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার পরমাণু প্রতিরোধ বাহিনীকে বিশেষ সতর্কতায় থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুতিন।

এর পর গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালিয়েছিল রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদের একটি এলাকায় কৃত্রিম ওই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালানো হয়। এরপর গত জুনে মহড়া চালায় রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনী। মস্কোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই মহড়া চলার কথা স্বীকার করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

আর অতি সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন: ‘যদি আমাদের দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়ে, আমরা নিঃসন্দেহে রাশিয়া এবং  জনগণকে রক্ষা করার জন্য হাতে থাকা সকল উপায় ব্যবহার করব। এটি কোনো ধোঁকা নয়।’

এরপরই রাশিয়া গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে দখল করা দক্ষিণ ও পূর্ব ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করে। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, তিনি ‘সব উপায়ে’ অঞ্চলগুলোর ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ রক্ষা করতে প্রস্তুত।

 

মার্কিন গোয়েন্দারা এটিকে পশ্চিমাদের জন্য কার্যত হুমকি হিসেবে দেখছে। মূলত ইউক্রেনকে এই অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করতে সাহায্য না করা, রাশিয়া যে পারমাণবিক যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে এমন একটি ইঙ্গিত পশ্চিমাদের কাছে পাঠাতে মস্কো এ কথা বলছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

পুতিনের এমন অবস্থানের মার্কিন প্রতিক্রিয়া কি?
ইউক্রেনের যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করতে রাশিয়াকে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করতে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

 

গত রোববার সম্প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এই জাতীয় পদক্ষেপ ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অন্য যেকোনো কিছুর বিপরীতে যুদ্ধের চেহারা পরিবর্তন করবে।’ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের মতো পদক্ষেপ ‘পরিণতিমূলক হবে’ বলেও সেসময় সতর্ক করেন তিনি।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং এর নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো যেকোনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া ঠিক কিভাবে জানাবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। তারা পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে এবং সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে নাও পারে। তবে এক্ষেত্রে পশ্চিমারা একটি সীমারেখাও এঁকে দিতে চাইতে পারে।

 

বিবিসি অবলম্বনে

 

বিভাগ : আন্তর্জাতিক

 

বেতনা নিউজ ২৪ /আ/ডে/

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version