দরিদ্র-অসহায়ের ডাক্তার ‘সানজিদা’

স্বাস্থ্য ডেস্ক,

 

ডা. সানজিদা ইসলামের জন্ম ১৯৮৪ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহ শহরের কৃষ্টপুর গ্রামে। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। কাটিয়েছেন শৈশব ও কৈশরের সোনালী দিনগুলো। শিশুকাল থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। মা ডাক্তার লুৎফর নাহার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরে এপ্রোন ও স্টেথোস্কোপ রেখে দিলে সেই এপ্রোন পরে ও স্টেথোস্কোপ নিয়ে খেলার ছলে বলতেন, মা বড় হয়ে আমি তোমার মতো ডাক্তার হবো। মানুষের সেবা করবো। এই স্বপ্ন লালন করেই বেড়ে উঠেন তিনি। স্কুল, কলেজ ও মেডিকেল কলেজে মেধা ও প্রতিভা ছড়িয়েছেন তার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে। হয়েছেন সফলও। বলছি ডা. সানজিদা ইসলামের কথা।

 

ডাক্তার হবার স্বপ্নে বিভোর সেই শিশুটিই আজ জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রসুতি ও গাইনি বিভাগের সহকারী সার্জন। চিকিৎসা সেবায়ও দক্ষতা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলছেন তিনি। ফ্রিতে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি গাঁটের পয়সা খরচ করে ওষুধ কিনে দেন দরিদ্র রোগীদের। তার মমতাময়ী ব্যবহারে রোগীরা অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেন। মানবতা ও সেবায় তিনি জামালপুরের দরিদ্র রোগীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ‘ডাক্তার আপা’ হিসেবে।

হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক চিকিৎসা ও মানব সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় তাকে মাদার তেরেসা স্বর্নপদকে ভূষিত করেন।

 

 

পড়ালেখায় হাতে খড়ি পাদ্রী মিশন স্কুলে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুল বিতর্ক, কবিতা আবৃতি, গার্লসগাইড ও খেলাধুলায়ও রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। কৃতিত্বের সাথে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও মমিনুন্নিসা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০ সালের ৪ জুলাই যোগদান করেন ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে বদলী হয়ে আসেন জামালপুর জেনারেল হাসপতালে।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্মরত নার্স ও ওয়ার্ড বয় বেশকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালের দিকে একদিন সিএনজি করে দু’পা কাটা অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে ইর্মাজেন্সি বিভাগে ফেলে রেখে যায়। কাটা পা থেকে রক্ত ঝরছিল। সেদিন ইনডোর ডিউটিতে ছিলেন ডা. সানজিদা ইসলাম। রোগীর খারাপ অবস্থা দেখে হাসপাতালের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন ডাক্তার সানজিদা। তাকে রেফার্ড করে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সেই রোগীকে রেফার্ড করা হলে পথেই রক্তক্ষরণে মারা যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই ডা. সানজিদা নিজ দায়িত্বে ইমার্জেন্সিতে দু’পা সেলাই করার ব্যবস্থা করেন। পরে জরুরি ভিত্তিতে রক্তের ব্যবস্থা করে শরীরে রক্ত পুশের ব্যবস্থা করেন।

ওষুধসহ যাবতীয় খরচ বহন করেন তিনি নিজেই। চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেন নাম পরিচয়হীন অসহায় ওই রোগীকে। এমনই মানবতার টানে এগিয়ে যাওয়ার নানা গল্প রয়েছে ডা. সানজিদা ইসলামকে ঘিরে। করোনার সময়ও দমে যাননি তিনি। ভয়কে জয় করে নিজের জীবনকে বাজি রেখে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন নিরলসভাবে।

এভাবেই পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা ও গাঁটের পয়সায় ওষুধ কিনে দিয়ে মানবসেবায় কাজ করে চলছেন এই ‘ডাক্তার আপা’।

ডা. সানজিদা ইসলাম বসবাস করেন শহরের গোলাপবাগ এলাকায়। কথা হয় গোলাপবাগের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন সুজনের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে ছুটে যান ডাক্তার আপার কাছে। তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধও দিয়ে দেন। রাত বিরাতেও এলাকার রোগী দেখেন। কোন সময় না শব্দটি শুনিনি। বিরক্ত হতেও দেখি নাই। হাসিমুখে এলাকার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের ডাক্তার আপা।

ডা. সানজিদা ইসলাম বলেন, ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল আমি পড়ালেখা করে ডাক্তার হব। ডাক্তার হয়ে আমার মায়ের মত মানুষের সেবা করে যাবো। পিতা-মাতার সে স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। তাই যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু করি। আর বাকি সময়টুকু মানুষের সেবা করে যেতে চাই।

 

 

 

বেতনা নিউজ ২৪ /স্বা/ডে/

1 comment

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version